নতুন বছরে নতুন শ্রেণিতে তোমাদের অভিনন্দন, স্বাগতম।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া মানে শিক্ষায় প্রাথমিক পর্ব শেষ করে মাধ্যমিকে প্রবেশ। তোমাদের জন্য পড়ালেখার নতুন এক পদ্ধতি নিয়ে আমরা অপেক্ষায় আছি।
এ পদ্ধতিতে তোমাদের আর পরীক্ষা এবং ভালো নম্বরের পিছনে ছুটতে হবে না। কেবল পরীক্ষার জন্য সম্ভাব্য প্রশ্ন জানা আর সেসবের উত্তরের খোঁজে থাকতে হবে না। এখন থেকে উত্তর মুখস্থ করাও তোমাদের মূল কাজ নয়। বাবা-মায়েরও ভালো টিউটর, কোচিং সেন্টার, গাইড বই আর তোমাদের পরীক্ষা ও প্রশ্ন নিয়ে উদ্বেগে কাটাতে হবে না। অযথা অনেক টাকাও খরচ করতে হবে না। আমরা জানি, তোমাদের প্রত্যেকের রয়েছে এক একটা সতেজ মন আর একটা করে খুবই সক্রিয় মস্তিষ্ক। তোমাদের কল্পনা শক্তি যেমন আছে, তেমনি আছে বুদ্ধি, তা খাটিয়ে পেয়ে যাও ভাবনার নানা পথ। মন আর মস্তিষ্কের মতো আরও কয়েকটা যোগ্যতা নিয়েই জন্মেছ সবাই।
এগুলোর কথা বিশেষভাবে বলতে চাই। বলছি মানুষের ইন্দ্রিয় শক্তির কথা। তোমরা আগেই জেনেছ আমাদের সবার আছে পাঁচটি করে বিশেষ প্রত্যঙ্গ- চোখ, কান, নাক, জিহ্বা আর ত্বক। এগুলো ইন্দ্রিয়ের কাজ করে। চোখ দিয়ে আমরা দেখি, এ হলো দৃষ্টিশক্তি, আর এটিকে বলি দর্শনেন্দ্রীয়। তেমনি কানে শুনি, এটি শ্রবণেন্দ্রিয়, নাক দিয়ে শুঁকি বা ঘ্রাণ নেই, এটি ঘ্রাণেন্দ্রিয়। জিহ্বা দিয়ে স্বাদ গ্রহণ করি, এটি স্বাদেন্দ্রিয়; আর ত্বক দিয়ে স্পর্শ করি, এটি স্পর্শেন্দ্রিয়। কিছু চিনতে, বুঝতে, জানতে এগুলো আমাদের সহায়তা করে। তাই ইন্দ্রিয়গুলো এত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ। এতসব সম্পদ মিলিয়ে তোমাদের প্রত্যেকের আছে- অফুরন্ত প্রাণশক্তি সীমাহীন কৌতূহল আনন্দ পাওয়ার অসীম ক্ষমতা এবং বিস্মিত হওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতা। আধুনিক শিক্ষা-বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরীক্ষা আর উত্তর মুখস্থ করার যে চাপ, তাতে তোমাদের এসব স্বাভাবিক ক্ষমতার বিকাশ ব্যাহত হয়।
শিক্ষায় বরং শিক্ষার্থীদের এই ক্ষমতাগুলোকেই কাজে লাগানো দরকার, তাতেই ভালো ফল মিলবে। এ থেকে তোমাদের নিজেদের কাজ সম্পর্কে একটু ধারণা নিশ্চয় পেয়ে যাচ্ছ। হ্যাঁ এই ব্যবস্থায় তোমরা বেশ স্বাধীনতা পাচ্ছ। তবে ভুলো না, স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে দায়িত্বও নিতে হয়। আচ্ছা, পড়ালেখাটা তো তোমার নিজেরই কাজ, নিজের জন্যই। তো নিজের কাজ নিজে করবে, এত খুব ভালো কথা। তবে আসল কথা হলো, কোনো কাজে যখন নিজেই সফল হবে, তাতে আনন্দ যে কত বেশি তা নিশ্চয় তোমরা বুঝতে পারো। তাই নতুন পথে শিক্ষা হবে আনন্দময় যাত্রা, পথচলা। রবীন্দ্রনাথের গানে আছে- যাত্রাপথের আনন্দগান। শিক্ষা হলো আনন্দগান সেই অভিযাত্রা- যেন গান করতে করতে পথ চলেছ। তোমরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে মাত্রই উঠেছ। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ। নতুন শ্রেণির পাঠের অনেক কিছুই হবে নতুন, অনেকটা অজানা। তবে অজানা আর নতুন বলেই তো এ পথচলাটা হবে অভিযানের মতো।
পথে যে চ্যালেঞ্জ থাকবে সেগুলো পেরোনোর অভিজ্ঞতা থেকে যেমন অনেক কিছু জানবে, শিখবে, করবে, তেমনি পাবে অফুরন্ত আনন্দ। অথচ এর জন্য বাড়তি কোনো খরচ লাগবে না। কারণ, চ্যালেঞ্জ মোকবিলার জন্য তোমাদের ভাঁড়ারে আছে নিজস্ব শক্তিশালী হাতিয়ার- কৌতূহল, বিস্ময়বোধ, প্রাণশক্তি এবং আনন্দিত হওয়ার ক্ষমতা। ইন্দ্রিয়গুলো এতে সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ করে। আর মজা হলো এগুলো টাকাপয়সার মতো নয়, ব্যবহারে খরচ না হয়ে বরং বাড়ে। কারণ, এসবই তোমার মনের সম্পদ, তুমি যত চর্চা করবে, ততই এগুলো ঝকঝকে থাকবে, কাজে হবে দক্ষ। বরং এগুলোর প্রেরণায় তোমাদের নতুন নতুন ক্ষমতার প্রকাশ ঘটবে। প্রথম ডাক পড়বে বুদ্ধির। নিজেদের বুদ্ধি খাটাতে হবে, ভাবতে হবে, আবার ভাবতে গেলে যুক্তির প্রয়োজন। এ হলো চর্চার বিষয়-বুদ্ধি খাটালে তা আরও বাড়বে, দেখবে কোনো কোনো গাছের ডাল- পাতা ছেঁটে দিলে গাছটি বাড়ে ভালো, ফলও দেয় বেশি। তোমাদের চাই বুদ্ধিকে খাটানো, যুক্তিতে শান দেওয়া।
আর ইন্দ্রিয়গুলোকে সজাগ রাখতে হবে, তাতে এগুলোয় দক্ষতাও বাড়তে পারবে। এভাবে অজানাকে জয় করবে, অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে চলতে চলতে বিস্ময়ে-আনন্দে মজে কখন যে অনেক কিছু জানা হয়ে যাবে টেরও পাবে না। তবে শুরু হোক এই জয়যাত্রা!